কি কারনে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে


কি কারনে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে

কি কারনে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে? অথবা ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ হতে আধুনিক যুগে উত্তরণের কারণসমূহ আলোচনা কর।অথবা ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ হতে আধুনিক যুগে আবির্ভাবের কারণগুলো তুলে ধরো। অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইউরোপের ইতিহাস কোর্স এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি।

কি কারনে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে

ভূমিকা: ইউরোপের ইতিহাসের তিনটি যুগ বিভাজনের মধ্যে আধুনিক যুগ অন্যতম। মধ্যযুগে যেমন নানা বৈশিষ্ট ভরপুর ছিল তেমনি আধুনিক যুব নানাবিদ বৈশিষ্টে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। মধ্যযুগের শেষ দিকে এমন কতিপয় বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে যা আধুনিক যুগ আনতে সাহায়তা করে। যে সকল বৈশিষ্ট্য আধুনিক যুগ আনয়ন করে এবং মধ্যযুগের অবসান ঘটাতে সাহায্য করে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো। মধ্যযুগ হতে আধুনিক যুগে উত্তরণের কারণ: মধ্যযুগের সমাপ্তি ও আধুনিক যুগের উদ্ভব নিয়ে বার্কি বলেছেন, nobody knows exactly when the Middle ages ended and the new era begin all answers whould contain arbitrary element. নিম্নে কারণসমূহ দেওয়া হল।

১. সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়:

মধ্যযুগে সামন্ত প্রথা একটি বর্বর রচিত প্রথা ছিল। পশ্চিম ইউরোপে এটি দীর্ঘদিন ছিল। আধুনিক যুগের সূচনা লগ্নে এটির অবক্ষয় ঘটে। ধীরে ধীরে এটির প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে। ভূমিধসরা সামন্তদের প্রভাব হতে মুক্ত হতে থাকে ।দাসরা নিজেদের শক্তিশালী করে সামন্তদের হাত থেকে নিজেদের মুক্ত করে । জাতীয়তাবাদী চেতনার অনুপ্রাণিত হয়ে রাজার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা ক্রমশ বাড়তে থাকে একসময় সামন্ত প্রথা বিলুপ্ত ঘটে।

২. গিল্ট ব্যবস্থা অবক্ষয়:

মধ্যযুগে গিল ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের নানাবিধ স্বার্থ রক্ষা করে চলত। মানুষ গিল্ডের মাধ্যমে উৎপাদন করতো এবং বিক্রয় করতো ।গিলদের বাইরে কেউ কাজ করতে পারত না। কিন্তু ত্রয়োদশ শতকে গিল্ডের নিদর্শনা মানা হতো না এই কারণে যে ,এই সময় পণ্য দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পায় ।কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ এর বিরোধিতা করতো অনেক। ফলে এক পর্যায়ে এই সংঘের পতন ঘটে।

৩. জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব:

মধ্যযুগে রোমান সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র হিসেবে ইউরোপ গণ্য করা হতো ।কিন্তু পোপত্যন্তের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে রাষ্ট্রয় গঠন হতে থাকে ।রোমান সাম্রাজ্য পতনের পর জাতীয় রাষ্ট্র গঠিত হতে থাকে।

৪. রেনেসাঁর প্রভাব:

রেনেসাঁর প্রভাবে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের উৎপত্তি ঘটে। রেনেসাঁর কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার লাভ করে । সমাজের মানুষ নিজেদের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। তারা বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করে। ভৌগলিক আবিষ্কার সাধন করে ।ফ্রান্স ,স্পেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড সহ নানা দেশে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের আগমন ঘটে.।

৫. ব্যক্তিত্বের বিকাশ:

মধ্যযুগের শেষের দিকে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেছিল ।পূর্বে তারা নানাবিধ আচরণ দ্বারা আবদ্ধ ছিল। কৃষকরা সামন্তদের দাস ছিল ।সামন্ত রাজার আবার রাজা পোপের অনুগ্রহ প্রার্থী ছিল। ধর্মীয় কারণে ব্যক্তি সর্বদা বাধা নিষেধের মাঝে ছিল। ব্যক্তিত্ব তেমনি ছিল অবমুক্ত। ফলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেনি । কিন্তু শেষ দিকে এসে ব্যক্তির বিকাশ ঘটে। সমাজে মানুষ নিজেদের সম্পর্কে জানতে থাকে তারা ধর্মীয় গোলামী হতে বেরিয়ে আসে ফলে শুরু তাদের বিকাশ এবং এরই সাথে আসে আধুনিক যুগ।

৬. ধর্ম সংস্কার আন্দোলন:

মধ্যযুগে পোপরা ধর্মের নামে অধর্ম কাজ করতো। তারা ধর্মের নামে মুক্তিপত্র বিক্রয় করত । মানুষ তাদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে তা ক্রয় করত ।জার্মানির মার্টিন লুথার প্রথম এর প্রতিবাদ করেন। তিনি ধর্মের নামে অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ হল ধর্ম সংস্কার আন্দোলন। ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ তাদের ভুল সমুহ বুঝতে পারে । তারা পোপদের ঘৃণা করতে শুরু করে। ফলে মানুষ আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে থাকে।   মেয়েদের স্বপ্নদোষ কিভাবে হয় হলে করণীয়

৭. ভৌগোলিক আবিষ্কার:

মধ্যযুগের শুরুর দিকে এশিয়ার সাথে ইউরোপের তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না ।ক্রুসেডের পর তারা তথা এশিয়ার লোকজন ইউরোপে প্রবেশ করে । ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে ।১৪৫৩সালে কনস্টান্টিনোপল পতনের মধ্য দিয়ে স্থল পথ বন্ধ হয়ে যায় । ফলে তারা জলপথে ভারত বর্ষ আসতে চেষ্টা করে অবশেষে ১৪৯৮সালে ভাস্কো দা গামা কালিকট বন্দরে আসে। এভাবে জলপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকা সহ নানাদেশ আবিষ্কার হয়। এতে যেমন নতুন ভূমি সন্ধান পাওয়া যায় । তেমনি ব্যবসা করার জলপথ পাওয়া যায়। ফলে পৃথিবীতে নতুন দিক উন্মোচিত হয় । এর ফলে আধুনিক যুগের পদার্পণ্ হয়। হেলেনিস্টিক সভ্যতা কাকে বলে 

৮. মুদ্রার প্রচলন:

মধ্যযুগে ইউরোপে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মধ্য দিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এবং ব্যাংক ব্যবস্থা বিকাশের সাথে সাথে মুদ্রা ব্যবস্থা প্রচলন ঘটে। ফলে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মানুষ মুদ্রা ব্যবস্থা ব্যবহার করে ।এতে বাণিজ্য যেমন সহজ হয় তেমনি লেনদেন সহজ হয়

৯. পুঁজিবাদের বিকাশ:

মুদ্রা ব্যবস্থা, ব্যাংক ব্যবস্থা ব্যবসার প্রসারের ফলে পুঁজিবাদের উদ্ভব হয় । মানুষ পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রচুর লাভবান হতে থাকে ।ফলে পুঁজিবাদের বিকাশের মাধ্যমে আধুনিক যুগের সূচনা হয়। উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে মধ্যযুগের সামন্ত প্রথা, পোততন্ত্র ,ধর্মীয় প্রভাব, মঠতন্ত্র ইত্যাদির অবক্ষয়ের মধ্য দিয়ে আধুনিক যুগের পদার্পণ ঘটে। এই যুগে নানাবিধ বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়ে আধুনিক যুগের আগমন ঘটে সুতরাং বলা যায় আধুনিক যুগ মধ্যযুগের ধ্বংসতূপের উপর প্রতিষ্ঠিত। এরকম নিত্য নতুন বিউটি অ্যান্ড হেলথ রিলেটেড টিপস এন্ড ট্রিক্স পেতে ফলো করুন আমাদের গুগল নিউজ অথবা ফেসবুক পেজে।
আরও ব্লগ নতুন ব্লগ
কোন কমেন্ট করা হয়নি
কমেন্ট করুন
comment url

আরও পড়ুন...