বদরের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

বদরের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

বদরের যুদ্ধের কারণ ইসলামের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।যা আমাদের প্রত্যেকটি মুসলমানের জানা জরুরী এছাড়াও এটি অনার্স প্রথম বর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিভাগের মুসলমানদের ইতিহাস কোর্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বদরের যুদ্ধে ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর প্রথম ছয় মাস বেশ সুখ শান্তিতেই কাটান। এদিকে মহানবী সাঃ এর প্রভাব প্রতিপত্তি ও অধিপত্য বিস্তারে ঈর্ষান্নিত হয়ে কুরাইশরা ষড়যন্ত্রের জাল বন্ধ থাকে। এ ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ মক্কার কুরাইশরা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ রমজান বদর প্রান্তরে মুসলমানদের সাথে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অবতীর্ণ হয়। যা ইসলামের ইতিহাসে এটি বদরের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এছাড়াও বদরের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল জানতে সম্পন্ন প্রশ্নটি করুন।

বদরের যুদ্ধের কারণ:

ভিন্ন কারণে মুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় নিম্নে বদর যুদ্ধের কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো।

  ১. কুরাইশদের শত্রুতা: ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ সাঃ নবুয়ত প্রাপ্তির পর ইসলাম প্রচার করতে থাকলে কুরাইশদের সাথে শুরু হয় সংঘাত। ইসলাম প্রচারের সাথে তাদের নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। হিজরতের পরও তাদের শত্রুতা থেমে থাকে নি এরই ফলশ্রুতিতে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ২. বাণিজ্য পথ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা: মক্কাবাসী কুরাইশরা মনে করলো মদিনায় মুসলমানদের অধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হলে, মদিনার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সিরিয়া অভিমুখী তাদের একমাত্র বাণিজ্য পথ বন্ধ হয়ে যাবে তাই তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

৩. মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র:

মুনাফিকরা ছিল ইসলামের চিরশত্র ু পাপিষ্ঠ এ মুনাফিক সম্প্রদায় ইহুদীদের সাথে গোপনে চলা পরামর্শ করে । মুসলমান ও ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কাফেরদের সাথে অস্ত ধরনের প্ররোচীত করে। 

৪. ইহুদিদের ষড়যন্ত্র: হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ক্রোম বর্ধমান প্রতিপত্তি ইহুদীরা সহ্য করতে পারেনি ।তাই সুবিধাভোগী কিছু ইহুদী নেতা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের সাথে মিশে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করতে থাকে । তাই ঐতিহাসিক আমির আলী "বলেন" সমগ্র মদিনা শহর বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতায় ভরে গিয়েছিল। 

৫: ইসলাম ও মহানবীকে নির্মূলের বাসনা: হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলাম এর আহবানে অনেকেই পূর্বপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্মের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয় ।ফলে ইসলামের এই অনির্বাণ দীপ্ত শিখানে মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে দেওয়ার মানুষেই মদিনা আক্রমে অগ্রসর হয়। 

৬:মদিনা সীমান্তে লুটতরাজ: কুরাইশ্যা মদিনা সীমান্ত স্থানীয় আদিবাসীদেরকে ধাওয়া করত । মদিনার পশু পাল লুটতরাজ ও বৃক্ষ ধ্বংস করত। সুতরাং তাদের এ সকল কর্মকান্ড বন্ধে মুসলমানরা আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়। ফলে বদর এ পরিণত হয়।বদরের যুদ্ধের কারণ

৭: নাখলার ঘটনা:

মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের গতিবিধি লক্ষ করার জন্য মক্কার উপ কন্ঠে একটি পর্যবেক্ষণ দল পাঠান । তারা মক্কার নিকটবর্তী নাখলা নামক স্থানে কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার উপর আক্রমণ চালিয়ে , কয়েকজনকে হত্যা করে ফলে কুরাইশরা চরমভাবে ক্ষেপে উঠে।বদরের যুদ্ধের কারণ....মুখে এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায় 

৮.আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার: কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বাণিজ্যের অজুহাতে এক কাফেলা নিয়ে সিরিয়া গমন করে। সেখান থেকে অস্ত্র নিয়ে মক্কায় ফিরছিল। প্রত্যাবর্তনের পথে মুসলমানদের আক্রমণের ভয়ে মক্কার সাহায্য চেয়ে পাঠায় ।আবু জাহেল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। 

৯: কাফেরদের রণপ্রস্তুতি: মদিনার মুসলমানদের নিধন করার উদ্দেশ্যে। মক্কার কাফেররা অর্থনৈতিক ,সামরিক, কূটনৈতিক, সর্বপ্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল আগে থেকেই ।ফলে তারা মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য আগে থেকেই এ ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। ১০: ঐশিবাণী: মক্কার কাফেরদের সমর অভিযানে মহানবী সঃ যখন খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন ।তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয় ।"আল্লাহর পথে তাদের সাথে যুদ্ধ কর ,তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে "তবে সীমালংঘন করো না।

বদর যুদ্ধের ফলাফল

১: সিদ্ধান্ত কারী ঘটনা: বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী ঘটনা। এ যুদ্ধে ইসলাম ও পৌত্তলিকতার চরম পরীক্ষা হয় ।অসত্যের উপর সত্যের জয় হয়। 
২. বিশ্ববীজয়ের সূচনা: বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ইসলামী প্রজাতন্ত্র সম্প্রসারণের সূচনা করে ।এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে ইসলাম প্রায় সারা বিশ্বে বিস্তৃতি লাভ করে। 
৩: প্রথম সামরিক বিজয়: ঐতিহাসিক পিকে হিস্ট্রি বলেন "বদর যুদ্ধ ইসলামের প্রথম সামরিক বিজয় " । কারণ এ যুদ্ধ অন্যদের উপর মুসলমানদের নৈতিক ও সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে.।
  ৪. কুরাইশদের শক্তি খর্ব: বদর যুদ্ধের পর কুরাইশদের শক্তি খর্ব এবং সকল প্রকার অহংকার ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ইসলামের গৌরব ও শক্তি মদিনা এবং এর আশেপাশের দিন দিন বহু গুণের বৃদ্ধি পেতে থাকে। 
৫. নবযুগের সূচনা: মানবতার ইতিহাসে বদর যুদ্ধ এক নবযুগের সূচনা করে ।হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদারতার মুগ্ধ হয়ে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করে। ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি আরো মজবুত হয়।বদরের যুদ্ধের কারণ 
৬. মিথ্যার উপর সত্যের জয়: পবিত্র কোরআনের ভাষায় "সত্য সমাগত মিথ্যা বিতাড়িত"। মিথ্যা বিতাড়িত হবার জন্যই বদর যুদ্ধে আলোচ্য আয়াত সত্য প্রমানিত হয়। 
৭. হযরত মুহাম্মদ সা: মর্যাদা বৃদ্ধি: বদরের যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্মান ও শক্তি বহু গুণে বেড়ে যায়। ফলে কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলামকে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল হিসেবে মেনে নেয়। 
৮: রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি: সামরিক দ্বন্দ্ব হিসেবে যতই নগণ্য হোক না কেন। বদরের যুদ্ধ হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত্তি রচনা করে। যা শুধু হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে ধর্মীয় নেতাই প্রমাণ করে না বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার আসনেও অধিষ্ঠিত হন।বদরের যুদ্ধের কারণ

উপসংহার:

পরিশেষে বলা যায় যে বদরের যুদ্ধে ছিল এবং মুসলমানদের বিশ্বজয়ের প্রথম সূত্রপাত। এই যুদ্ধের পরপরই মুসলমানরা তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে ওঠেন। এবং তাদের বিজয় পতাকা পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকে। সুতরাং বদর যুদ্ধকে ইসলামের ইতিহাসে এক চমৎকার আন্দোলন সৃষ্টিকারী ঘটনা বলা যেতেই পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার ডিউটি অ্যান্ড হেলথ রিলেটেড টিপস এন্ড ট্রিকস পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে
আরও ব্লগ নতুন ব্লগ
কোন কমেন্ট করা হয়নি
কমেন্ট করুন
comment url

আরও পড়ুন...