আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতি
আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতি। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এটি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ইতিহাস বিভাগের আফ্রিকার ইতিহাস কোর্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।১৯১২ সালের মধ্যে আফ্রিকা ইউরোপীয় scamble ইস্কাম্বুল সমাপ্ত হয়। এবং এই সময়ের মধ্যে প্রায় সমগ্র আফ্রিকা ইউরোপীয় শক্তি বর্গের উপনিবেশে পরিণত হয়। আফ্রিকায় ইউরোপীয়দের উপনিবেশিক শাসনের সূচনা থেকে বিভিন্ন ধরনের শাসন পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। শুরুতে আফ্রিকার স্থানীয় সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ইউরোপীয়দের খুব সামান্য ধারণা ছিল। দখল করা যতটা সহজ ছিল শাসন করা ততটা সহজ ছিল না। বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি এ কারণেই আফ্রিকা দখলের শুরু থেকেই বিভিন্ন ধরনের শাসন পদ্ধতি বা নীতি প্রণয়ন করতে সচেষ্ট হয়।আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতি আফ্রিকায় ইউরোপীয়রা যে ধরনের শাসন নীতি অনুসরণ করে ,তাকে মোটামুটি ভাবে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। ১. কোম্পানির শাসনব্যবস্থা. ২. সমন্বয় মূলক শাসন ব্যবস্থা. ৩. সহযোগিতামূলক শাসন ব্যবস্থা. ৪. প্রত্যক্ষ শাসন ব্যবস্থা ৫. পরোক্ষ শাসন ব্যবস্থা.
উপনিবেশিক শাসনের প্রকারভেদ। (ধরন)
আফ্রিকায় কার্যকর শাসন পদ্ধতি গড়ে তোলা ছিল বেশ কঠিন। কেন আফ্রিকার মানুষের আর্থসামাজিক বা রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছিল ইউরোপীয়দের থেকে ভিন্ন। আফ্রিকার মত বিশাল মহাদেশ শাসন করার মতো এত প্রশাসক ইউরোপীয়দের নিয়োগ করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া ইউরোপীয়রা কোন অঞ্চল শাসনব্যবস্থা প্রয়োগ করলে তার সফল পাওয়ার জন্য সময়ের দরকার ছিল। এছাড়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য বিদ্রোহ তাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এ সকল বিষয়ে ভাবার পরে অর্থাৎ শাসকদের লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক শোষণ নিশ্চিত এবং নিজ নিজ জাতির প্রভাব বৃদ্ধি করে আফ্রিকায় তাদের প্রভুত্ব যতটা সম্ভব দীর্ঘস্থায়ী করা।আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতিক.কোম্পানির শাসন ব্যবস্থা
ইউরোপীয় প্রায় সব দেশেই বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে আফ্রিকায় শাসন শুরু করে। ইস্ক্যাম্বল ফর আফ্রিকার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানি আফ্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আসে এবং নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়িয়ে চলে। তবে এক্ষেত্রে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কোম্পানিগুলো বাণিজ্য ছাড়তে স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ।এবং ধীরে ধীরে ওই এলাকার সাম্রাজ্য বিস্তারে অগ্রসর হয়। কোম্পানিগুলো স্থানীয় অনেক গোত্রের সাথে চুক্তি করে ।ঐসব কোম্পানিকে নিজ নিজ দেশের সরকার সাহায্য সহযোগিতা করে । সরকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক চার্টার বা সনদ নিয়ে তাদের কাজকে সহজ করে দিত ।প্রসঙ্গক্রমে কয়েকটি কোম্পানির কার্যক্রম আলোচনা করা যায়।১. রয়াল নাইজার কোম্পানি:
ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রয়েল নাইজার কম্পানি অন্যতম।
২. ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকা কোম্পানি:
এই প্রতিষ্ঠায় যার ভূমিকার প্রধান তিনি হচ্ছেন সিলস রোড ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের সনদ লাভ এবং বিশাল এলাকায় উক্ত কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনিও আমাদের অন্য স্থানীয় গোত্র প্রধানদের সাথে বিভিন্ন চুক্তি এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে । কোম্পানির মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষ করে বর্তমান জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে অঞ্চলে স্থাপন করতে সক্ষম।
৩. রাজকীয় ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা কোম্পানি.:
রাজকীয় ব্রিটিশ পূর্ব আফ্রিকা কম্পানি পূর্ব আফ্রিকার বিশেষ করে বর্তমান কেনিয়ার কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিল। এই কোম্পানি ১৮৮৫ সালে বার্লিন সম্মেলনের পরেই ব্রিটিশ সরকারের উৎসাহে উইলিয়ামস ম্যাককিনন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। কি কারনে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে
৪. জার্মান পূর্ব আফ্রিকা কোম্পানি:
কাল পিটারস , প্রিন্স অটো মন, বিশ মার্কের সমর্থন নিয়ে দুই এপ্রিল ১৮৮৫ সালে জার্মান পূর্বে আফ্রিকা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
খ. সমন্বয় মূলক শাসন ব্যবস্থা
ইউরোপীয়রা আফ্রিকার দেশ শাসনীতি গ্রহণ করে তার মধ্যে অন্যতম ছিল সমন্বয়মূলক শাসন ব্যবস্থা। এই নীতি অনুসারে উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠাকারী দেশের জনগণের সাথে উপনিবেশ জনগণের সমন্বয়ে সাধনকে বোঝায়। এই নীতি অনুসরণে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না। উপনিবেশ মূল রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এই নীতি প্রধানত ফ্রান্স ও পর্তুগাল গ্রহণ করে। চার্জ ডারউইনের বিখ্যাত সামাজিক মতবাদ অর্থাৎ ইউরোপীয়রা আফ্রিকানদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর জাতি। এই মতবাদের প্রচার প্রসারের পূর্বেই উনিশ শতকের শুরু থেকে ফ্রান্স সেনেগালের উপকূলবর্তী অঞ্চলের সমন্বয় নীতি গ্রহণ করে। ফরাসিরা সেনেগালের সম্পূর্ণ এলাকায় এই নীতি গ্রহণ করেনি। তারা সেনেগালের চারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে এই সমন্বয় নীতি গ্রহণ করে। অঞ্চলগুলো হল। সেন্ট লই, ডাকার ,ঘরে এবং রাফিজকো।আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতি ফ্রান্স উপলক্ষে এলাকায় ফরাসি নাগরিকত্ব প্রদান উপনিবেশ আমলের পূর্বেই চালু করে। সেনেগালের প্রস্তাব্দ ভাগ এবং আফ্রিকায় ফ্রান্সের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষকে আফ্রিকার আইন বা প্রথার মধ্যেই বসবাস করতে দেওয়া হতো। ফরাসি বিপ্লব ১৭৮৯ থেকে সমন্বয় মূলক শাসনব্যবস্থার উৎপত্তি। ফরাসি বিপ্লবের মহান বাণী সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতা এবং আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান । এই নীতি হতে ফ্রান্স এবং ফ্রান্সের বাইরেও ধর্ম ,বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সব মানুষকে এক করে দেখার প্রবণতা দারুন ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮ শতকের নব্বইয়ের দশকে অর্থাৎ ফরাসি বিপ্লবের পরপরই সেনেগালের সেন্ট লুই অঞ্চলে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার বৃদ্ধি করা হয়। তবে ফ্রান্সের রাজতন্ত্র এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা আফ্রিকানদের রাজনৈতিক অধিকার প্রশ্নে কঠোর ছিল। সমন্বয় মূলক নীতি ফরাসি সংস্কৃতি বিস্তারের একটা উপায় ছিল। ফরাসিরা মনে করতো আফ্রিকানদের সভ্য করা এবং ফরাসি রূপে গড়ে তোলা তাদের দায়িত্ব। যাতে করে আফ্রিকানরা ফরাসিদের মতো গড়ে উঠবে। ফরাসি সংস্কৃতির বিস্তার মানেই আফ্রিকার সাংস্কৃতির মূল্য কে অস্বীকার বা লুপ্ত করা। এভাবে আফ্রিকার সমাজকে সভ্যতা ও ইতিহাস বিবর্জিত এক পশ্চাদকামি সমাজ রূপে গণ্য করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসন পদ্ধতি.
সমন্বয় নীতির প্রকারভেদ
সমন্বয় নীতিকে প্রধান দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ব্যক্তিক সমন্বয়.
২. অব্যক্তিক সমন্বয়।
ব্যক্তিক সমন্বয় (personal assimilation)
ব্যক্তিক সমন্বয় নীতি অনুযায়ী জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ সমান। উপনিবেশ জনগণের সাথে মিল রেখে শাসন ব্যবস্থা প্রণয়ন করায় এ সমন্বয় নীতির মূল কথা। এই নীতি অনুসারে উপনিবেশ গুলো মূল রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আবেক্তিক সমন্বয় (non personal assimilation)
ব্যক্তিক সমন্বয় নীতিকে আবার প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. প্রশাসনিক সমন্বয় নীতি.
প্রশাসনিক সমন্বয় নীতি অনুসারে উপনিবেশ শক্তি সরাসরি প্রশাসনিক ক্ষমতা হাতে নেয়। উপনিবেশ রাষ্ট্র ও উপনিবেশ কে তার অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করত।
২. রাজনৈতিক সমন্বয় নীতি.
আবেগ থেকে সমন্বয় নীতির দ্বিতীয় পর্যায়ে হচ্ছে এ রাজনৈতিক সমন্বয় নীতি। বলা হয় যুদ্ধের পর উপনিবেশগুলো থেকে প্রতিনিধি মূল রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে যোগ দেবে বা দিতে পারবে। কিন্তু তা মূল রাষ্ট্রের জনগণের সমান প্রতিনিধিত্বের সমানুপাত হবে না। এই ক্ষেত্রে উপনিবেশগুলোকে মূল রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের চেয়ে সংখ্যায় অত্যন্ত কম রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
৩. অর্থনৈতিক সমন্বয় নীতি।
সর্বশেষ অবৈক্তিক সমন্বয় নীতি হচ্ছে অর্থনৈতিক সমন্বয় নীতি এই নীতি অনুসারে মূল রাষ্ট্রের অর্থনীতিকের সাথে উপনিবেশ গুলোর অর্থনীতির সমন্বয় সাধনের প্রয়াস নেওয়া হয়।